শেখ সাদি ফরিদ উদ্দীন আত্তার সাইদ নুরসি ওয়ারিস শাহ নিজামী গজনবী ফেরদৌসী
শেখ সাদি
শেখ
সাদিকে বলা হয় ইরানের প্রধানতম কবি। তার পুরো নাম আবু মুহাম্মাদ মুসলিহ
আল-দিন বিন আবদেল্লা শিরাজী। প্রকৃত নাম শরফুদ্দীন। ডাক নাম মুসলিহ উদ্দীন।
আর উপাধি বা খেতাব হচ্ছে সাদি। আসল নাম নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে
পরিচিত হয়ে আছেন উপাধি ‘সাদি’ নিয়ে। তার সাহিত্যের ভক্ত পাঠক ছড়িয়ে আছে
বিশ্বজুড়ে। তিনি শুধু একজন কবি নন, মানবতাবাদী সমাজ চিন্তাবিদও। ইরানের
শিরাজ শহরে শেখ সাদি জন্মগ্রহণ করেন। শিরাজ ছিল এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের
ভূমি। এখানেই এই মনোরম সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন শেখ সাদি তার কাব্য
প্রতিভার গুণে। তার জীবন শুরু হয় বেদনাসিক্ত অনুভবে। যখন শেখ সাদির বাবার
মৃত্যু ঘটে তখন তিনি নিতান্তই শিশু। এ ছাড়া পরিবারে ছিল দারুণ অভাব। এই
অভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। কৈশোরেই তার স্বভাবজাত জ্ঞানের দ্যুতির দেখা
মেলে। শিক্ষা গ্রহণের আকুলতাকে তিনি এড়িয়ে যাননি। তরুণ বয়সে কবি চলে আসেন
বাগদাদ শহরে। বাগদাদ তখন সাহিত্য আর সাহিত্যিকদের চারণভূমি। এ যেন জ্ঞানের
তীর্থস্থান। বাগদাদের সুবিখ্যাত ‘আল নিজামিয়া’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা
চালিয়ে যান। সময়টা ১১৯৫ থেকে ১২২৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি। এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষা
নেন শারিয়া, আলকেমি, গভর্নমেন্ট, হিস্টোরি, অ্যারাবিক লিটারেচার অ্যান্ড
থিওলজি বিষয়ে। তার জ্ঞানের পরিধি কতদূর বিস্তৃত সেটা বিষয়গুলোর দিকে
তাকালেই বোঝা যায়। এরই মাঝে এলো যুদ্ধ। দুর্ধর্ষ মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়ার
খোওয়াইজম নগর ও পারস্য আক্রমণ করেছে। জন্মভূমিতে আর ফিরতে পারেননি শেখ
সাদি। বাগদাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ালেন।
এ সময় তিনি রজনা করলেন তার সেরা কাজ বোস্তান। এটি শেষ করেন ১২৫৭ সালে। তার
আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলিস্তান শেষ করেন এর পরের বছর। গুলিস্তানের
‘বনি আদম’ সারসংক্ষেপ কাব্যিক বৈশিষ্ট্যে এখনো মুগ্ধ করে পাঠকদের।
ফরিদ উদ্দীন আত্তার
তার
পুরো নাম আবু হামিদ বিন আবু বকর ইব্রাহিম। তিনি লেখালেখি করেছেন ফরিদ
উদ্দীন নামে। তার লেখনী এতটাই হৃদয়গ্রাহী ছিল যে, পাঠকরা তাকে সুগন্ধির
সঙ্গে তুলনা করতেন। তার নামের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় আত্তার বা সুগন্ধি
ব্যবসায় শব্দটি। তিনি হয়ে উঠেন তার সময়ে অন্যতম প্রধান মুসলিম কবি। তার
কবিতা পড়ে মানুষের মন স্রষ্টার প্রতি আকৃষ্ট হতো। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার আবেগ
তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ফারসি কবি কিন্তু সুফিবাদের ছোঁয়া রাখতের
তার কবিতায়। শুধু তাই নয়, কবিতার আড়ালে সুফিবাদের যে প্রেমময় দিক উঠে আসত
তা পরবর্তীতে স্থায়ী ভিত্তি লাভ করে। ফরিদ উদ্দীন আত্তার অন্তত ৩০টি বই
লিখে গেছেন। তার একটি বিখ্যাত বই হচ্ছে ‘মানতিকে তাইয়ার’ বা ‘পাখির
সমাবেশ’। তিনি গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করেন তা কবিতা আকারে লিখে
গেছেন।
সাইদ নুরসি
সাইদ
নুরসিকে অনেকে চেনেন বদিউজ্জামান নামে। এই প্রখ্যাত লেখক রিসালায়ে নূর
নামক কোরআনের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এটির আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠারও বেশি।
আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে
ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী
ছিলেন। যে কারণে তাকে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বর্তমানে ইসলাম
নিয়ে উচ্চশিক্ষার যে ধারা চালু রয়েছে এর নেপথ্যে তার অবদান অনস্বীকার্য।
সাইদ নুরসি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত
প্রদেশের নুরস নামক কুর্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধর্মীয় বিতর্কে
পারদর্শিতা দেখান। ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পর তাকে
বদিউজ্জামান নাম প্রদান করা হয়, যার অর্থ ‘সময়ের অদ্বিতীয় ও সবচেয়ে উচ্চ
ব্যক্তি’।
ওয়ারিস শাহ
ওয়ারিস
শাহ পাঞ্জাবি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন।
তিনি পাঞ্জাবের জানদিয়ালা শের খান (বর্তমানে পাকিস্তানে) নামক এলাকায় একটি
বিশিষ্ট মুসলিম সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সৈয়দ মোহাম্মদ আল-মাক্কির
শিষ্য ছিলেন। তার বাবার নাম ছিল গুলশের শাহ। যুবক অবস্থায় তার পিতা-মাতা
মারা যান। ওয়ারিস শাহ প্রধানত হীর রাঞ্জা নামক কবিতার লেখক হিসেবে পরিচিত,
যার পঙিক্তগুলো পাঞ্জাবি সাহিত্যের গুপ্তধন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তার
রচিত অনেক পঙিক্ত রয়েছে যা পাঞ্জাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও ব্যবহৃত হয়।
ওয়ারিস শাহর জীবনী নিয়ে পাঞ্জাবি ভাষায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৬৪
সালে ওয়ারিস শাহ নামে একটি পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ভারতেও ২০০৬
সালে তার জীবনী নিয়ে ওয়ারিস শাহ : ইশ্ক দ্য ওয়ারিস নামে আরেকটি ছবি নির্মিত
হয়।
নিজামী গজনবী
ফারসি
কবি ও বিশ্বসেরা সাহিত্যিকদের একজন নিজামী গজনবী। তার আসল নাম জামাল
আল-দিন আবু মুহাম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাক্কি। এই মুসলিম কবির কবিতায়
স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য পঙিক্ত পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার কাব্যিক ধরনও
নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমান আজারবাইজানে তিনি জন্মগ্রহণ
করেছিলেন। মসনবী ধরন কবিতায় তিনি গুরু বলে স্বীকৃত। তার সেরা কীর্তি
‘খামসা’। এটি মূলত পাঁচটি দীর্ঘ কবিতার সংকলন। তার জীবনের বড় একটি সময় তিনি
এই কবিতার পেছনে ব্যয় করেন। এ কবিতাগুলোকে বিশ্বসাহিত্যে ‘পাঁচ রত্ন’ বলা
হয়।
ফেরদৌসী
শাহনামা
লিখে সাহিত্যের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছেন ফেরদৌসী। তিনি ছিলেন
পারস্যের একজন বিখ্যাত কবি। তার রচিত ‘শাহনামা’ একই সঙ্গে ইরানের ও সারা
বিশ্বের ফারসি ভাষাভাষী লোকজনের জাতীয় মহাকাব্য। শাহনামা প্রাচীন ইরানের
ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাথা। এতে আছে ৯৯০টি অধ্যায় ও
৬২টি কাহিনী। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্ত্যমিল। মনে করা হয়,
শাহনামার আগেও ফেরদৌসী কিছু কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া
যায়নি। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর ইরানের বিভিন্ন শাসক ও বাদশাহদের কাহিনী তুলে
ধরেন শাহনামাতে।
ফরিদ উদ্দীন আত্তার
সাইদ নুরসি
ওয়ারিস শাহ
নিজামী গজনবী
ফেরদৌসী
No comments
Thanks for comment