Header Ads

Header ADS

মৌলবাদী কারা আর এটা কি দূষনীয়??


মৌলবাদী কারা আর এটা কি দূষনীয়??

মৌলবাদ কোনো আরবি বা ফার্সি শব্দের বাংলা অনুবাদ নয় ׀ Fundamentalism একটি ইংরেজি শব্দ,যার বাংলা করা হয়েছে ‘মৌলবাদ’ আর অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে বর্ণিত ‘ফান্ডামেন্টালিজম’- এর অর্থ হল, যে কোনো ধর্মের মৌলিক শিক্ষাসমূহকে কোনো শৈথীল্য বরদাস্ত না করে কঠোর অনুশীলন, লালন ও পালন করা। তবে সর্বজনসীকৃত দুটি অর্থ হল (১) প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্রবিধির প্রতি অন্ধ বিশ্বাস (২) স্বধর্মপরায়ণ׀

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে,১৮০০ সালের দিকে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের স্রোতধারায় ভেস্তে যাচ্ছিল খ্রিস্টধর্মের অনেক বিশ্বাস ও প্রচলিত ধারণা׀ শুরু হয় নাস্তিক্যবাদের (aethism) প্রসার ׀ তখন সমাজের একটি অংশ খ্রিস্টধর্মের হেফাজতের জন্য Milton এবং Lyman Stewart নামের দুই ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে ৬৪ জন লেখক (যাদের মধ্যে ছিলেন পণ্ডিত, পাদ্রী এমন কি মন্ত্রীও ( মুসলমান নয়) ধারাবাহিকভাবে ১২টি ভলিউমে খ্রিস্টধর্মের মূল বিষয়াদি বর্ণনা করেন। এই  ভলিউমগুলোর নাম দেয়া হলো The Fundamentals. ধীরে ধীরে ধর্ম-কর্ম ছেড়ে দেয়া অনেক খ্রিস্টান এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় ׀ এই মতবাদের নাম দেয়া হল Fundamentalism (মৌলবাদ) এবং এই মতবাদে যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে লাগল তাদেরকে বলা হল Fundamentalist যারা প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্রবিধির প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করত,বাংলায় যার সরাসরি অর্থ হয় ‘মৌলবাদী’। ১৯২২ সালে শব্দটি প্রথম মৌলবাদী অর্থে ব্যবহার করা হয় ׀

নিরপেক্ষ পাঠক মাত্রই অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করবেন যে, এই কথিত Fundamentalism এর প্রথম অর্থের সাথে ইসলাম এবং মুসলমানদের দূরতম সম্পর্ক নেই׀

মৌলবাদের আসল এবং দ্বিতীয় অর্থ হল স্বধর্মপরায়ণতা। এ অর্থে কোন ধর্মের মূলভিত্তি ও আদর্শকে নিগুড় অনুসন্ধান করে তা যথাযথরূপ অনুসরণে সচেষ্ট হওয়া বা ধার্মিকতাকে বুঝায় যারা কোন নির্দিষ্ট বিষবস্তুর মূলনীতিগুলো অকপটে মেনে নিয়ে যথাযথ পালন করে । যদি সে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে তবে সে মুসলিম মৌলবাদী। যদি খৃষ্টান হয় তবে খৃষ্টান মৌলবাদী। ইয়াহুদী হলে ইয়াহুদী মৌলবাদী, হিন্দু হলে হিন্দু মৌলবাদী। নাস্তিক হলে নাস্তিক মৌলবাদী।

আর এটা সর্বজনিবিদিত যে,গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কিংবা বিষয়ে মৌলবাদী না হলে ধ্বংস বা ক্ষতি অনিবার্য। যেমন ভালো ডাক্তার হতে হলে তাকে জানতে হবে মৌলিক বিষয় এবং অনুশীলনী চালাতে হবে ঔষধের মূল কার্যকারীতার ওপর।গণিতবেত্তা বা গণিতবীদ হতে হলে জানতে হবে এবং একাগ্রচিতত্তে নুশীলনী করতে হবে গণিতের মূল সূত্রের ওপর। কেউ বিজ্ঞানী হতে চাইলে তাকে মৌলিক সূত্র,ফর্মূলা,ব্যাখ্যা জানতে বুঝতে হবে এবং গভীর গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে অনুশীলনী চালাতে হবে বিজ্ঞানের মৌলতত্ত্ব ও মূল সূত্রগুলোর ওপর। তদ্রুপ কেউ অর্থনীতিবদি হতে চাইলে তাকে জানতে হবে তদসংলিষ্ট মৌলিক বিষয়াবলি । অর্থাৎ তাদের হতে হবে তাদের জগতের মৌলবাদী । নতুবা যা ঘটবে তা অগ্রহণযোগ্য এবং অকল্পনীয়।

আপনার/আমাদের মৌলবাদী হওয়া অবশ্যই উচিত,যদি আপনি নিজ ধর্মকে সেরা না ই মনে করনে তাহলে আপনার ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী হবেন কভিাবে?? তবে অন্য ধর্মকে অবজ্ঞা কিংবা তুচ্ছ মনে করা এবং নিজ ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর অধিকার কারো নেই। যদি কেউ ঘটিয়ে থাকে তাহলে সে সন্ত্রাসী,অপরাধী এবং ডাকাত দলের মৌলবাদী কারণ তারাও তাদের কিছু মূলনীতি মেনে,কৌশল ব্যবহার করে থাকে।

তাই বলা যায় নাস্তিকরাও মৌলবাদী কেননা তারাও তাদের নিজস্ব মতবাদ,মূলনীতি এবং বিশেষ কিছু পদক্ষেপে দিনাতিপাত করে থাকে।

মোদ্দ কথা হল,যদি ধর্ম বা মতবাদের মধ্যে খারাপ,অযৌক্তিক,মানবতাবিরোধী কিছু না থেকে বরং মানুষের উপকারী কিছু থাকে ও মানুষের মধ্যে একতা, ভালবাসা বৃদ্ধি পায় তাহলে সেই ধর্মের মূল বিষয় মেনে মৌলবাদী হওয়া উচিত।

আর ইসলাম ৫টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইমান, নামাজ, জাকাত, হাজ্জ এবং রোজা। এই ৫টা মূলনীতির মধ্যে আপনারা কোন জিনিসটা খারাপ দেখেন? এই মূলনীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে মৌলবাদী হলে সমস্যা কোথায়?

ইসলাম ধর্ম অনুসারে মুসলিমরা ইসলামের বানী সবার কাছে পৌছে দেয় কিন্তু কাউকে জবরদস্তি করে বা বাধ্য করে কোন কাজ করা বা ইসলাম কবুল করানো নিষিদ্ধ। একজন মুসলিম হতে হলে তাকে সৎ, বিনয়ী, ন্যায়পরায়ন, আইন মান্যকারী, সত্যবাদী, ভদ্র হতে হবে। অহংকার ও হিংসা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। যে মানুষ উপরের বিষয়গুলো কঠোরভাবে মানবে সেই ভাল মৌলবাদী মুসলিম হতে পারবে। যে উপরের এই বিষয়গুলো মেনে চলে সেই মানুষ সমাজের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের সমাজের সবার মৌলবাদী মুসলিম হওয়া

অনেক মুসলিম/অমুসলিম বন্ধুর মনে ভুল ধারণা আছে যে,ইসলামের মূলনীতি মানবতার পক্ষে যায় না, ইসলাম মানুষকে ছোট করেছে, ইসলাম হানাহানি, মারামারির ধর্ম। যেই ভুলগুলো আমরা বন্ধুবর্গ অকপটেই করে চলেছে। আর সেই ধারনা থেকেই মৌলবাদীকে গালি হিসাবে প্রচলন করছে। তারা  আসলে মৌলবাদের প্রকৃত অর্থে না ধরে বিকৃত অর্থের কারণেই করে যাচ্ছে। যা হস্যকর এবং হৃদয় বিদারকও বটে।কেউ বা বিদেশী প্রভুদের মনরঞ্জনে হীন চেষ্টায় এমন করে থাকে যা আসলেই লজ্জাজনক! আমরা আশা করা দেশ,দশ এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মসুলমানদের স্বার্থে তাদের এ হীন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

আবার কতিপয় বুদ্ধির ঢেঁকিরা বিশ্ব মিডিয়ার সহযোগিতায় হরহামেশাই মুসলমানদেরকে ভিন্ন অর্থে কথিত মৌলবাদী আখ্যায়িত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । তাদের মতে,মৌলবাদীরা নাকি নিজ ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ট ধর্ম স্বীকার করে পর ধর্মকে করে তুচ্ছ করে থাকে। আর তাই হানাহানি মারামারি নাকি লেগেই থাকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বের বর্বোরচিত ঘটনাবলি কোন মৌলবাদীরা ঘটিয়েছে?? অাসলে দোষ মৌলবাদীর না কতিপয় দোষীদের। তাই আমাদের সকল ব্যাপারে চোখ,কান খোলা রেখে চলা এবং মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করি।

আবার কথিত মৌলবাদের জন্মস্হান এবং সংরক্ষণাগার আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব আজ মুসলমানদেরকেই তাদের মৌলবাদীর কথা বলে দোষারূপ করতে চায়। তাদের বোধোদয় হক এই প্রত্যাশা রইল।

No comments

Thanks for comment

Powered by Blogger.